`করোনা পজিটিভ এলেও ঘাবড়ে যাইনি '
‘করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ এলেও ঘাবড়ে যাইনি। এমনিতেই আমার মনোবল শক্ত। এর মধ্যে চিকিৎসকেরা তাৎক্ষণিক সাহস দেন। হাসপাতালে থাকতে বলেন। আমিও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিই। এখন আল্লাহর রহমত ও চিকিৎসকদের সেবায় সুস্থ আছি।’ এটা ৫৫ বছর বয়সী এক কোভিড-১৯ রোগীর কথা। চট্টগ্রাম নগরের ফিরিঙ্গিবাজারের এই কাঠ ব্যবসায়ীর করোনা ধরা পড়ে ১০ এপ্রিল। চিকিৎসকের পরামর্শে আগের দিন চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি হন। ১১ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর তাঁর তিন দফা পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ আসে। ২০ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন তিনি। চট্টগ্রামে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনায় ৪৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১০ জন। মারা গেছেন ৫ জন। এই ব্যবসায়ী অনেক দিন ধরে ডায়াবেটিস, রক্তচাপ ও অ্যাজমার সমস্যায় ভুগছিলেন। এ ধরনের রোগীদের করোনায় ঝুঁকি বেশি। বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর কাছে তিনি তুলে ধরেন চিকিৎসকদের আন্তরিকতা ও হাসপাতালের পরিবেশের কথা। দেন পরামর্শও। গত দুই বছরের মধ্যে দেশের বাইরে যাননি এই ব্যবসায়ী। ভাই ও ছেলে দেশের বাইরে থাকলেও এ সময় দেশে আসেনি। তাই কীভাবে কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হলেন, তা তাঁর বোধগম্য নয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সপ্তাহখানেক আগে থেকে জ্বর আসে তাঁর। প্রতিদিন জ্বর ৯৯ থেকে ১০২–এ ওঠা-নামা করে। ৯৯–এ এলে তাঁর মনে হতো ভালো হয়ে গেছেন। কিন্তু আবার জ্বর বাড়ে। এ অবস্থায় একটি বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রের কর্মীদের রক্ত ও প্রস্রাবের নমুনা পরীক্ষা করতে দেন। বাসা থেকে তা নিয়ে যান তাঁরা। এতে কিছু পাওয়া যায়নি। কিন্তু জ্বর না কমায় এক চিকিৎসকের কাছে যান। প্রথমে অবশ্য দেখতে চাননি। পরে একজনের ‘রেফারেন্সে’ দেখতে রাজি হন। কিছু ওষুধ লিখে তখনই সরাসরি ফৌজদারহাটের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন ওই চিকিৎসক। এই ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কেবল জ্বর ছিল। কাশি, হাঁচি, শরীরব্যথা কিছুই ছিল না। তারপরও চিকিৎসকের পরামর্শমতো ফৌজদারহাট হাসপাতালে চলে যান। হাসপাতালের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ওখানে যাওয়ার পর ইনজেকশন দেওয়া হয়। নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ইনজেকশন দেওয়ার পর ওই দিন জ্বর আসেনি। পরদিন সন্ধ্যায় চিকিৎসক করোনার ফল পজিটিভ আসার কথা জানান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনে কেমন মনে হয়েছে জানতে চাইলে ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রথমে বোগাস মনে হয়েছে। তবে কোনো ধরনের ভীতি কাজ করেনি। চিকিৎসকেরা জানান, “হাসপাতালে থাকতে হবে। এখানেই আপনার চিকিৎসা চলবে।” হাসপাতালের পরিবেশ ও চিকিৎসা সম্পর্কে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, করোনার কথা শুনে যেখানে সবাই পালিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে চিকিৎসক-নার্সরা রয়ে গেছেন। তাঁদের গোল্ড মেডেল দেওয়া উচিত। চিকিৎসকেরা ২০ ফুট দূরে থেকে কথা বললেও রোগীদের সাহস দিয়েছেন। তাঁরা যা করেছেন, তা অভাবনীয়। চীনে করোনা সংক্রমণ হওয়ার পর থেকে এ বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা প্রবন্ধ ও প্রতিবেদন নিয়মিত পড়তেন বলে ওই ব্যবসায়ী। তাঁর মতে, মানুষ মনে করছে, করোনা মানে মৃত্যু। করোনা মানে ভয়। আসলে তা নয়। করোনা থেকে বাঁচতে হলে ঘরে থাকতে হবে, সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না।